বাটপারের খপ্পরে একদিন

আজ থেকে আট বছর আগের কথা। পড়লেখার জন্য ঢাকায় এসেছি।সম্পূর্ন। অপরিচিত এক শহর। গ্রামে থাকাকালীন ঢাকা সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছি। তাই ঢাকাকে নিয়ে কৌতুহল ছিল। ঢাকার তখন অনেক কিছুই চিনি না। নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু বেশ ভালোই কাটছিল দিনগুলো। গ্রামে থাকাকালীন সময়ে শুনেছিলাম ঢাকায় নাকি পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরীও করা যায়। মূলত সেই আশায় ভরসা করেই ঢাকায় পড়তে আসা। ভাবলাম যে লেখাপড়ার পাশাপাশি যদি একটি চাকরী জুটিয়ে নিতে পারি তবে ভালোই কাটবে দিনগুলো। চাকরীর জন্য পত্রিকা দেখতে থাকি। সংবাদ পড়ার চেয়ে আগে কোথাও কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আছে কিনা সেটা দেখে নিই। কিন্তু দেখি সবখানেই শুধু অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় এবং সব ফূলটাইম চাকরী আবার তাও শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া অনার্স/মাস্টার্স। কিন্তু তখন তো সবে ভর্তি হয়েছি অনার্সে। তাই দু’চোখে সর্ষেফূল দেখতে থাকি। কেননা চাকরী না পেলে যে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
হঠাৎ একদিন দেখি পত্রিকার এককোণায় একটি ছোট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। কোন অভিজ্ঞতার বালাই নেই, পার্টটাইম জব, বেতনও বেশ আকর্শনীয়। সরাসরি আজই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ। বেশ লোভনীয় একটি বিজ্ঞাপন। ঠিকানাটি এখন সঠিক মনে নেই। যতোদূর মনে সেই অফিসটি ছিল মগবাজার মোড়ে। বিজ্ঞাপনটি কেটে নিয়েই সেদিনেই ভোঁদৌড় অফিসের দিকে। অনেক খুঁজে খুঁজে দেখি একটি গলির ভেতরে একটি বিল্ডিংয়ের দোতলায় অফিস। অফিস বলতে ছোট দুইটি রুম। ভিতরে ঢুকেই বললাম, ‘একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন আপনারা’। টেবিলের সামনে বসা লোকটি বলল, ‘হ্যাঁ, আমাদের নতুন অফিসের জন্য বেশ কিছু লোক প্রয়োজন’। লোকটি জিজ্ঞেস করল আমার লেখাপড়া কতদূর। আমি বললাম। তখন সে একটি ফরম বের করে বলল, ‘এই ফরমটি পূরণ করুন আর ফরম বাবদ পাঁচশত টাকা দিন’। আমার কাছে তখন পাঁচশ টাকা ছিল না। আমি বললাম, ‘আমার কাছে তো পাঁচশ টাকা নেই’। লোকটি তখন বলল এখন যতো আছে ততই দেন বাকিটা পরে দিলেও চলবে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দেখি মাত্র ষাট টাকা মতো। লোকটি বলল আপাতত পঞ্চাশ টাকা দেন আর বাকি গুলো আমরা যখন আপনাকে ফোন করব তখন নিয়ে আসবেন। ফরমটি পূরন করে পঞ্চাশটি টাকা দিয়ে বের হয়ে আসি।
কিন্তু সেই ফোন আর পাইনি। পঞ্চাশ টাকা খোয়ানো ব্যথাটি ছিল অনেক দিন। কেননা তখন পঞ্চাশ টাকা ছিল আমার কাছে অনেক টাকা। আজ যদিও একটি ভালো চাকরি করি, মাইনেও বেশ ভালোই পাই। তারপরেও সেই বাটপারের খপ্পরে পরার ক্ষনটি মনে পড়ে। কষ্টের পাশাপাশি একটু হাসিও পায় নিজের বোকামির জন্য।
কষ্টটা আরও বেড়ে যায় যখন দেখি এই ঠকবাজরা আজও তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আজও ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে, বাসে-ট্রেনে তাদের লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। আর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে শত শত বেকার যুবক টাকা হারাচ্ছে। ফলে বেকার যুবকের দীর্ঘশ্বাস আরও বেড়ে যাচ্ছে, হতাশার গ্লানিতে ডুবে যাচ্ছে তারা।

0 মন্তব্যসমূহ