নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য নিয়ে কিছু কথা

বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমও পরিবর্তন হয়। অতীতে ইতিহাস বইয়ের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন নিয়ে দেশে অনেক কান্ড ঘটে গেছে। কিছুদিন আগে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে পরিবর্তন নিয়েও সরকারকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। সর্বশেষ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য বইয়েও সেই পরিবর্তনের কু-অভ্যাস জেঁকে বসেছে। পরিবর্তন যুগের দাবী। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আসতেই পারে, এতে ক্ষতির কিছু নেই। কিন্তু ক্ষতিটা তখনই হয়, যখন পাঠ্য বইয়ে লেখার গুণগত মান বিচার না করে ক্ষমতা আর পদাধিকার বলে পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়।
গত সাতাশ মে প্রথম আলো পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল, 2013 সালের নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ ও কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতা দুটি বাদ দিয়ে শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’ নামের কবিতাটি সংযোজন করা হয়েছে। ‘বঙ্গবাণী’ ও ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতা ‍দুটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও ভাষার মর্যাদা নিয়ে রচিত।
কবি আবদুল হাকিম হচ্ছেন মধ্যযুগের বিখ্যাত বাঙ্গালী কবিদের একজন। তার কবিতায় আছে স্বদেশের ও দেশের ভাষার প্রতি অটুট ও অপরিসীম প্রেম। মধ্যযুগে বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা দেখে তিনি তার বিখ্যাত কাব্য ‘নূরনামা’য় লিখেছিলেন-
“যে সবে বঙ্গতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।”
অপরদিকে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম কবি। তার দুটি বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতা হল ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’।
তার আর একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল ‘মাগো ওরা বলে” এই কবিতাগুলো বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখ্যযোগ্য সংযোজন। জনাব আবু নাসের চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি পড়ার আমার সৌভাগ্য হয়নি। তার এই কবিতাটি উক্ত দুজন কবির কবিতার কতটুকু মূল্যবান সেই বিচারের ভারটি পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম।
প্রথম আলোর মাধ্যমেই জানতে পারি কবিতা দুটি বাদ দেওয়া সম্পকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটি সেটা গ্রহন করেনি। যে কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্ভট সিদ্ধান্তটি মেনে না নেওয়ারই কথা। এখানে আর একটি বিষয়ে আলোচনা করতে হয়, সেটি হল- নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে শুধু উক্ত দুজন কবির কবিতা কে বাদ দেয়া হয়নি বরং আর তের জন আধুনিক ভারতীয় কবির কবিতা সংযোজন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বকবি সেখানে স্থান পেতে পারেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এই তের জন কবি সবাই কি বাংলাদেশে খুবই বিখ্যাত। কতজন ছাত্র-ছাত্রীই বা তাদের কে চিনে। তাই স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, ভারতের পাঠ্য বইয়ে কয়জন বাংলাদেশী কবির কবিতা স্থান পেয়েছে? আসলে ভারত প্রীতি আমাদের একটু বেশিই বলে মনে হয়। তা না হলে বাংলাদেশে অনেক নামকরা কবি থাকতেও কেন ভারতের তের জন আধুনিক কবির কবিতা স্কুলের পাঠ্যক্রমে স্থান পায়।

0 মন্তব্যসমূহ