জিদ

-হ্যালো, কেমন আছো?
-ভালো, তুমি?
-আমি ভালো আছি, অফিসে যাচ্ছো মনে হচ্ছে।
-হ্যাঁ
- সকালের খাবার খেয়েছো
-হ্যাঁ
-কি খেয়েছ?
-ভাত
-তোমাকে না নিষেধ করেছি সকালে ভাত খাবে না। এমনিতেই তোমার পেটের আয়তন বাড়তেছে।
-ঠিক আছে আর খাব না।
-দুপুরের খাবার নিয়েছ?
-না
-কেন?
-সকালে বুয়া আসতে দেরি করছে তো তাই।
-কেমন বুয়া, যে নিয়মিত আসে না।
-ঢাকার বুয়ারা এমনই। নিয়মিত আসেনা আবার আসলেও মনোযোগ দিয়ে রান্না করে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। দুপুরে সময় মতো খাবার খেয়ে নিবে আর অফিস শেষ করে সোজা বাসায় চলে আসবে, কোথাও দেরী করবে না।
-আচ্ছা।
-স্যার, আপনি নামবেন না, বাস তো আর সামনের দিকে যাবে না। বাসের সুপারভাইজারের কথায় সম্বিত ফিরে পায় আসিফ। বাসে বসেই একটু তন্দ্রাভাব এসেছিল, আর ঠিক তখনই কাবেরী এসে হাজির। দ্রুত বাস থেকে নেমে সামনের দিকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটা শুরু করে। আজকাল প্রায়ই এরকম হচ্ছে তার। একা একা কথা বলা, উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলা, রাতে না ঘুমিয়ে বারান্দায় আনমনে পায়চারী করা। এসবের শুরু হয়েছে কাবেরী তার জীবন থেকে চলে যাবার পর। আসিফের ভূবন আলোকিত করে এসেছিল মেয়েটি। বাসায় এসেই যেন আসিফের সমস্ত দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে তুলে নেয় কাবেরী। সে কখন ঘুমাবে, কোথায় যাবে, কি খাবে, কি পরবে এক কথায় জীবনের সবকিছুই ঠিক করে দিত মেয়েটি। সে ছাড়া আসিফ যেন একমুহুর্তও নড়তে-চড়তে পারত না। অথচ এখন কাবেরী ছাড়াই বেচেঁ আছে। নিজের বেঁচে থাকাটা নিয়ে যেন একটু অবাক হয় । কাবেরী চলে যাওয়ার পিছনে নিজের কোন দোষ খুঁজে পায় না সে। শুধু ছোট একটি ভূল তার সংসার জীবনটাকে যে এমনভাবে এলোমেলো করে দিবে এটা ভাবতেই পারে না। জিদ তাহলে মানুষকে এতোই দূরে ঠেলে দেয়, জীবনটাকে এভাবে ওলট-পালট করে দেয়? ধুপ করে রাস্তার ধারে একটা বন্ধ দোকানের বেঞ্চিতে বসে আকাশের দিকে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ঘন কালো হয়ে আসছে আকাশের মেঘগুলো। আজ যেন তার কালো মনের ছায়া পড়েছে মেঘে। বৃষ্টির আসার সম্ভাবনা দেখে আবার উঠে দাঁড়ায়। রাস্তার ফুটপাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে আসিফ। এদিকে মুষলধারে বৃষ্টিও শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তার শরীর। আজ শরীরের সাথে যেন মনও ভিজতে থাকে আসিফের। বৃষ্টির পানি শরীর বেয়ে পড়ছে আর সে যেন নিজেকে আরও হালকা অনুভব করছে। তখনই সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকালেই যাবে সে কাবেরীকে ফিরিয়ে আনতে। জিদ কার এটা সে আর খুঁজতে যাবে না। অনেকদিন পর একটা ভালো লাগার আমেজ অনুভব করে। একটা অন্যরকম শিহরণ জাগে। কিন্তু বুকের ঠিক কোন জায়গায় সেটা বুঝে উঠতে পারে না আসিফ।

0 মন্তব্যসমূহ