সাম্প্রতিক ভাবনাঃ কিছু অপ্রিয় সত্য কথা

শুরুতেই বলে নিচ্ছি আমার এই লেখা পড়লে অনেকেরই মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে আমার এই লেখা হয়তো শব্দনীড় কতৃপক্ষ নাও প্রকাশ করতে পারে। আবার অনেকেই হয়তো আমাকে নব্য রাজাকার, বিরোধীদলের দালাল বলে ডাকতে পারেন। অবশ্য তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কারণ যেটা সত্য সেটা আমি বলবই। কেননা আমার এই লেখা যেমন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যাবে তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধেও যাবে।
আমরা জানি বর্তমান সরকার তার সমালোচনা শুনতে রাজী না। সরকারের সমালোচনা করলেই সে হয়ে যায় রাজকার, দেশদ্রোহী। তবে আমার এই লেখা পড়ে অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন আমি গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে লিখছি, লিখছি শাহবাগের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমি নিজেও একসময় প্রজন্ম চত্তরে গিয়েছি। গলা উঁচিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী করেছি। শাহবাগের আন্দোলন শুরুই হয়েছিল মূলত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে। কিন্তু দিন যতোই গড়িয়েছে দাবীতে ততই পরিবর্তন এসেছে। একদফা দাবী থেকে সেটা পরিণত হয়েছে ছয়দফা দাবীতে। আন্দোলনটাও এখন আর ব্লগারদের হাতে যে নেই সেটা দিবালোকরে মতই পরিষ্কার। কেননা, ডা. ইমরান এইচ সরকার নিজেই একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমি তাকে ভালো করেই চিনি। তিনি আমাদেরই এলাকারই ছেলে। তাকে শাহবাগ আন্দোলনের মুখপাত্র না বলে সরকারের মূখপাত্র বলাটাই আজ মনে হয় শ্রেয়।
যেহেতু আন্দোলনটিকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে তাই এখন ফাঁসির দাবী থেকে সরে গিয়ে নয়া দিগন্ত, আমারদেশ, ও দিগন্ত টেলিভিশন বর্জন আর মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের দাবীর মধ্যে দিয়ে। গণতন্ত্রের প্রাণ গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে আজ। এখন আবার শাহবাগ থেকেই বিরোধীদলের আন্দোলনকে প্রতিহতের ঘোষনা দেয়া হচ্ছে। যেটা আগে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হতো। যদিও একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদল কে সরকারের বিকল্প বলা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটা দলেরই মিছিল, মিটিং, হরতাল দেয়ার অধিকার রয়েছে। এটা সংবিধানেই উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার নির্দেশনা কে কে দিতে পারবেন, কে ‘প্রিয় দেশবাসী’ সম্বোধন করতে পারবেন, তা বলা থাকলেও ডা. ইমরান এইচ সরকারই দিয়ে যাচ্ছেন অহরহ নানা নির্দেশ। শাহবাগ থেকে এখন দাবী তোলা হচ্ছে মাহমৃদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে। আমার তো মনে হয় ফাঁসির দাবী থেকে এখন একজন সম্পাদককে গ্রেফতারের দাবী শাহবাগের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাড়িঁয়েছে। তাই তো শাহবাগে গিয়ে এখন আর বলতে পারি না একটাই দাবী, ফাসি, ফাঁসি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত যতো আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তার সবগুলোই ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ নিয়ে কোন আন্দোলন হয়ে থাকলে সেটি একটি বিরল ঘটনা। কিন্তু এই বিরল ঘটনাটিই এখন ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বলা যায়, যে আন্দোলনই শুরু হোক না কেন সেটা সরকারের বিরুদ্ধেই চলে যায় এবং সরকারও সেটা খড়গহস্তে দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনে আমরা দেখছি তার ঠিক উল্টো। এখানে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যে সব কিছু হচ্ছে সেটা এখন অনেকেই বুঝে গেছে। সরকার শাহবাগের আন্দোলন থেকে বরাবরই ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে এবং একটু সফলও হয়েছে বলা যায়। কেননা এই আন্দোলনের ফলে সরকারের পাহাড়সম দূর্নীতির খবর একটু হলেও জনগণের আড়ালে চলে গেছে। বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার প্রক্রিয়ায ধীর গতি, সাগর-রুনীর হত্যার তদন্ত আজও শেষ না হওয়া, ইলিয়াস আলী,আমিনুল, চৌধুরী আলম, লিয়াকতের গুমের রহস্য উৎঘাটিত না হওয়া, পদ্মা সেতুর দূর্নীতি, শেয়ার বাজার, ডেসটিনি ও হলমার্ক কেলেংকারী, ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজী, নিয়োগ বাণিজ্য, দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি, ফেলানীসহ সীমান্ত হত্যা, বিরোধীদলের তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ইত্যাদি একটু হলেও শাহবাগের আন্দোলনের কারণে ঢাকা পড়ে গেছে।
দেশের মানুষ কে বোকা পেয়ে ধোঁকা দিয়ে আজ তাদের কে আন্দোলনে নামানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে সাঈদীকে নাকি চাঁদে গেছে। ধর্মে বিশ্বাসী সরল মনা মানুষ গুলোকে এভাবে আন্দোলনে শরীক করা হচ্ছে। আবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জীবন বাচাঁনোর জন্যই তারা গুলি করে মানুষ মারছে। রাষ্ট্র নীরন দর্শকের ভুমীকা পালন করছে যা কোন জাতির জন্যই শুভ পরিণতি বয়ে আনবে না। আজ ভীষন কষ্টের বিষয় এই যে, দেশ আর দেশের মানুষের খবর রাখার মতো আজ কেউ নেই। সরকার ব্যস্ত বিরোধীদল সাইজ করতে, প্রশাসন ব্যস্ত নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে, বিরোধী দল ব্যস্ত হরতাল করতে আর সরকারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধারে, পাতি দল ব্যাস্ত বড় দলের পশ্চাৎদেশ লেহনে, সুশীলরা একবার এই দিকে, আরেকবার ওইদিকে, মিডিয়া তেল প্রয়োগে বিশেষ সজাগ। কিন্তু দেশের সাধারণ আম জনতার কথা ভাবার মতো এখন আর কেউ নেই।

0 মন্তব্যসমূহ