যে অপেক্ষার শেষ নেই

সূর্যি মামা পুব আকাশে সবে মাত্র উকিঁ মারতে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়ে দুই চোখে যেন রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে সোহানের। কিন্তু মাথার ঠিক বাপাশে রাখা তার মুঠোফোনটি তাকে জানিয়ে দিল যে এই সাত সকালে কেউ তাকে মিস্‌ড কল দিয়ে স্বরণ করছে। একবার না! তিন তিন বার। ঘুম ঘুম চোখে কল ব্যাক করা মাত্রই ওপাশ থেকে কেউ একজন কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলল, স্যরি ভাইয়া আমার একজন পরিচিত কে মিস্‌ড কল দিতে গিয়ে আপনার নাম্বারে চলে গেছে। কণ্ঠ শুনেই তার মনে হয় আসলেই হয়তো বা মেয়েটি ভুল করেছে। তাই প্রচন্ড রকমের একটা গালি দেওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্বেও সেটা চেপে গিয়ে বলল, মিস্‌ড কল নাম্বার চেক করে দেখবেন না। বলেই লাইনটা কেটে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সোহান।
পরের দিন সকাল বেলা আবারও কয়েকটা মিস্‌ড কল পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে তার সোহানের। মুঠোফোনটি হাতে নিয়ে দেখে গতকালের সেই নাম্বার থেকে এসেছে কলটি।
-কি ব্যাপার, আবারও কি ভুল করে মিস্‌ড কল দিলেন নাকি?
-না ভাইয়া, এবার ইচ্ছে করেই মিস্‌ড কল দিয়েছি। গতকালের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি খুবই দুঃখিত। আচ্ছা ভাইয়া আমি যদি মাঝে মাঝে আপনাকে ফোন করে বিরক্ত করি তাহলে কি রাগ করবেন। একটানা কথাগুলো বলে যায় মেয়েটি।
-বিরক্ত করলে মানুষ তো রাগ হবে তাই না? ঠিক আছে আমি বিরক্ত হব না।
-আমার নাম প্রিয়া, সিলেট থাকি। আপনার নাম কি, কোথায় থাকেন? আমার কোন বন্ধু নেই তো তাই আমি আপনাকে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবো।
সোহান নিজের পরিচয় দিল। সেই থেকে শুরু।
এরপর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুইটা মিস্‌ড কল দেওয়ার পর তৃতীয় বার কল করত প্রিয়া। মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে কখন তারা আপনি থেকে তুমিতে এসেছে তা দুজনেই কেউই খেয়াল করেনি। ভাইয়া থেকে হয়েছে বন্ধু। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা। দুই মেরুর সম্পূর্ন দুটি অচেনা মানুষ যখন সারারাত কথা বলে যায় তখন মনে কত যুগ থেকে তারা যেন একে অপরের পরিচিত। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে দিতে পারবে একে অন্যকে। এভাবে গড়িয়ে যায় জীবনের তিনটি বছর। কিন্তু কেউ কাউকে দেখেনি। কথা ছিল যেদিন দেখা হবে সেদিনই তারা বিয়ের কাজটিও সেরে নেবে। কিন্তু কথা দিয়েও কথা রাখেনি প্রিয়া। সে আজ কানাডা প্রবাসী এক ছেলেকে বিয়ে করে কানাডার বাসিন্দা হয়েছে। সেই থেকেই তার সব শেষ। কোথায় সেই ওয়াদা, কোথায় সেই প্রেম আর কোথায় সেই বন্ধুত্ব।
এখনও প্রতিটা সকাল অপেক্ষায় কাটে সোহানের। এই বুঝি একটা মিস্‌ড কল আসবে, তারপর আসবে একটা এসএমএস। তারপর ফোন- ‘কি এখনও ঘুম থেকে ওঠোনি’?
এরকম একটি মিস্‌ড কলের অপেক্ষায় ইতোমধ্যে জীবনের দশটি বছর কাটিয়ে দিয়েছে সে। এ অপেক্ষার পালা কবে শেষ হবে সে নিজেও জানে না। শুধু জানে তার একটা মিস্‌ড কল আসবে, তারপর তার মুঠোফোনটি বেজে উঠবে তার সেই প্রিয় রিংটোনে।

0 মন্তব্যসমূহ