ভারত-পাকিস্তান পারে, আমরা পারি না কেন?

বিশ্বের প্রতিটা স্বাধীন রাষ্ট্রের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। যে নীতির আলোকে একটি রাষ্ট্র তার প্রতিবেশী তথা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নির্ধারন করে থাকে। বাংলাদেশেরও একটি পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল; ’সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’।
কিন্তু বন্ধুত্ব মানে এই নয় যে, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিনের পর দিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সীমান্ত হত্যা সহ্য করে যাবে। ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক যে সকল বাংলাদেশী কে হত্যা করা হয় তার সিংহভাগই হচ্ছে নিরীহ কৃষক, জেলে ও শিশু। বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যার তিব্র প্রতিবাদ করতে পারছে না বলেই আজকে ফেলানীর মত কিশোরী কে নির্যাতিত করে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কাঁটাতারের বেড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। উপরন্তু বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কোন মন্ত্রী যখন বলেন “তারা (বিএসএফ) আত্মরক্ষার্থে গুলি করতেই পারে।” এই কথা মূলত বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এভাবে নিরপরাধ বাংলাদেশীকে হত্যা করার পরেও সরকার দেশের স্বার্থে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে নাই।
কিন্তু একই ঘটনা যদি আমরা ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখব সম্প্রতি দুইজন ইতালীয় সেনা কর্তৃক ভারতীয় জেলেকে হত্যা করার জন্য ইতালী ও ভারতের মধ্যে কি কাণ্ডই না ঘটে গেল। ভারতের সরকার ও আদালত রীতিমত আদেশ দিয়ে বসল যাতে ইতালীয় রাষ্ট্রদূত দেশের বাইরে যেতে না পারে যতক্ষণ না ইতালী উক্ত দুই সেনা কে ভারতে ফেরত না পাঠায়। আর তাই ইতালী দোষী দুই সেনা কে ভারতের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। ভারতের এটাই হল সার্বভৌমত্বের সুরক্ষ। বাংলাদেশ কি পারবে ভারতের মতো এমন জোরালো প্রতিবাদ করতে।
এবার আসা যাক পাকিস্তানের কথায়। বাংলাদেশের সকল মানুষই এখন জানে বর্তমানে দেশের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে নির্দলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা। যা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু বিরোধীদল সেই তত্ত্বাবধায়ক ইস্যূতে এখনও আন্দোলন করে যাচ্ছে (মাঝখানে কিছুদিনের জন্য শাহবাগের আন্দোলনের কারণে আন্দোলনটি ঝিমিয়ে পড়েছিল)।
একথা আমরা সকলেই জানি যে একটি নির্দলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার অতীতে আওয়ামীলীগের একটি অন্যতম দাবী ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা সেই ব্যবস্থাটিই তুলে দিয়েছে। বিরোধীদল ইতোমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে যে তারা নির্দলীয় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিবে না এবং কোন নির্বাচনও হতে দিবে না। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, সংবিধান অনুযায়ী দেশে নির্বাচন হবে অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে কোন পক্ষই কোন রকমের ছাড় দিচ্ছে না সেখানে সংঘাত অনিবার্য। আর তাই দেশের স্বার্থেই যতদ্রুত সম্ভব দুই দলকেই একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় বসা উচিৎ।
পাকিস্তানের মতো একটি সংঘাত পূর্ন দেশে আজ তারা আলোচনার মাধ্যমেই একটি অর্ন্তবর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু করতে পেরেছে। 16 মার্চ পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। যার প্রধান হয়েছেন বেলুচিস্তানের (অব) বিচারপতি মীর হাজার খোসো। শপথ গ্রহনের পরপরই তিনি আগামী 11 মে সাধারণ নির্বাচন অসুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। শুধু পাকিস্তান নয় নেপালও গ্রহন করেছে বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার (1991) গঠনের পদ্ধতি। 14 মার্চের ঘোষনা অনুযায়ী 10 সদস্য বিশিষ্ট অর্ন্তবর্তীকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রধান হয়েছেন বিচারপতি খিলরাজ রেগমী। এই সরকার আগামী তিন মাসের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে।
যেখানে পাকিস্তান, নেপালের মতো দেশ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে সেখানে কি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দিয়ে দেশকি একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে উচ্চ আদালত থেকে রুল জারির পরেও দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং দুই দলের কিছু নেতার অযাচিত কথা-বার্তা সংলাপের সম্ভাবনা কে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমেই যে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব সেটা ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল বুঝতে পারলেও আমাদের নেতা-নেত্রীরা বুঝতে পারে নাই।

0 মন্তব্যসমূহ