গণমাধ্যম, সরকার এবং আমার কিছু কথা

বর্তমান সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে তা হল, মিডিয়া বর্তমানে সম্পূর্নরূপে স্বাধীন। এমন স্বাধীনতা তারা কোন সরকারের আমলে পায়নি। ভালো কথা। মিডিয়ার স্বাধীনতা সবাই চায়। কিন্তু স্বাধীনতার সাথে সাথে মিডিয়ার নৈতিকতা বা সমআচরণ-এর প্রয়োজনীয়তাও যেন শেষ হয়ে গিয়েছে। মিডিয়া গণতন্ত্রকে যেমন যেমন শক্তিশালী ও টেকসই করতে সহায়তা করে তেমনি গণতন্ত্রকে বিকারগ্রস্থও করতে পারে, মিডিয়া তিলকে তালও বানাতে পারে।
মিডিয়ার কাজের ধরণ দেখে কেউ বলতে পারবে না যে, বাংলাদেশের মিডিয়া দায়িত্বশীল। বর্তমানে মিডিয়া নিয়ে মানুষের মনে ভুল ধারনা পোক্ত আসন গেড়ে বসেছে। মিডিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এর কিছু কারণও রয়েছে। যেমন, বলা হয়ে থাকে শাহবাগের আন্দোলন সৃষ্টির পেছনে মিডিয়ার ভূমীকা রয়েছে। কিছু কিছু মিডিয়া এটাকে একটু ফুলে-ফেঁপে প্রচার করেছে বলেই এমন হয়েছে। টিভিতে লাইভ প্রচার করা হয়েছে অবিরত। সরকার থেকে যেমন ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে তেমনি টিভির লাইভ শো’তেও বলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বয়কট করতে। যখন ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তখন মিডিয়া বলেছে সাধারন জনতা এটা করেছে। যদিও সেই ঘটনায় জড়িত ছিল সরকারদলীয় নেতা-কর্মী আর গণ জাগরণ মঞ্চের লোকজন। কিন্তু মিডিয়া আসল ঘটনা বলেনি। এখানেই মিডিয়া জনগনকে ফাঁকি দিয়েছে। জনগনকে সত্য জানার অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে মিডিয়া।
গত ছয় মে গভীর রাতে দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সরকারের যৌথ বাহিনী চতুর্মূখী আক্রমণ করে শত শত মানুষ কে হত্যা করলেও মিডিয়া এখানে নিশ্চুপ। তারা ব্যস্ত পল্টনের দোকনপাট, হেফাজত কর্মী কর্তৃক পুলিশকে মারধর ঘটনা প্রচারে। পল্টন ও বায়তুল মোকাররমের ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক এবং এগুলো অবশ্যই প্রচার যোগ্য কিন্তু এর সাথে মতিঝিলের গণহত্যা কি প্রচার যোগ্য নয়। কিন্তু কিছু মিডিয়া মতিঝিলের ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে। এই গণহত্যার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিয়ে তারা প্রচার করছে না। এর বদলে তারা প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হেফাজতে কর্মীরা দেশের কোথায় কি কি ক্ষতি করেছে সেটা নিয়ে। কিন্তু পাঁচ ও ছয় মে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা যে পুলিশের সাথে একযোগে হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সেটা মিডিয়া গোপন করে যাচ্ছে। হেফাজতের শত শত কর্মীকে যে রাতের আধাঁরে হত্যা কর হল সেটা প্রচার হচ্ছে না। মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে না নিহত ও আহত হওয়া হেফাজত কর্মীদের পরিবারের দুঃখের কথা। শুধু সরকারের তোষণনীতিতেই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মিডিয়া।
সরকারও এক্ষে্ত্রে কম যান না। গণমাধ্যমের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে সরকার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে ব্যস্ত। কোন গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করলেই সেই গণমাধ্যমকে সরকারের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। সরকার ক্ষমতায় এসেই চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশের প্রকাশনা এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যমুনা টিভিকে সম্প্রচারের আসতে দেয়া না হলেও সরকার তার পছন্দসই অনেক চ্যানেলকে সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ কে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সর্বশেষ সরকার দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, মতিঝিলের গণহত্যার খবর যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্যই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
সরকার এভাবে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করার মাধ্যমে তার বাকশালী চরিত্রের পূণঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে কি না সেটাই এখন সাধারণ মানুষ কে ভাবিয়ে তুলছে।

0 মন্তব্যসমূহ