সুসংবাদ

সেই ভোর বেলা সংবাদটি শোনার পর থেকেই ভোরের ফুরফুরে মিষ্টি হাওয়ায় যেন উড়ছিল ফাহাদের মন। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বাসা থেকে বের হয় সে। সাধারণত সে গান গায় না। তারপরও আজকের বেসুরো গলাটি কেন জানি তার নিজের কাছে বেশ সুন্দর মনে হয়। তার গুনগুন করে গাওয়া সুরটি যেন হাওয়ার সাথে মিশে দিগন্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর এই লোকটি অনেক দিন পর বেশ ঠান্ডা মেজাজে আবিষ্কার করে ঝুমা। কে বলবে হালকা-পাতলা গড়নের এই ছেলেটি এতো মোটা হয়েছে এখন। ভূড়িটাও একটু বেড়েছে তার। গতকাল রাতে শোবার সময় তার স্ত্রী ঝুমা সেটা নিয়ে একটু হাসাহাসিও করেছে। পুরুষ মানুষ একটু চর্বী জমতেই পারে। সে তো বন্ধুদের আড্ডায় শুনেছে হালকা একটু ভূড়ি না বাড়লে এযুগে নাকি আর চলে না। তার আর এক বন্ধু হারুনের বিশাল ভূড়ি। সে একটু কৌতুক করেই বলে-‘এটা যে সে ভূড়ি নয়, এটা হল খান্দানী ভূড়ি।’ তারপরেও ঝুমা ফাহাদকে সর্তক করে দেয় নিয়মিত সকালে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে।
এই তিন কূলে ফাহাদের এই বউটিই সব। এছাড়া তার আর আপন বলে কেউ নেই। মায়ের কথা ঠিক মতো মনেই করতে পারে না সে। সে শুনেছে অনেক ছোটবেলাতেই তাকে রেখে তার মা পরপারে চলে গিয়েছে। তারপর বাবাই তাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে। ছেলের মুখের দিকে চেয়ে তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। ফাহাদ কে গোসল করানো, রান্না করে খাওয়ানো, স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই করছে তার বাবা হাসান সাহেব। বাবার খুব শখ ছিল মরার আগে ছেলের বউ দেখে যাবেন। তাই তাকে একটু দ্রুতই বিয়ে করতে হয়েছে। বাবার পছন্দের পাত্রী ঝুমা। ঝুমাকে ঘরে আনার মাস তিনেকের মাথায় তার বাবাও চলে যান তাকে ছেড়ে। তিনি হয়তো তার সকল দায়িত্ব শেষ করে নিশ্চিন্তে চলে যেতে চেয়েছিলেনে এবং তিনি সফলও হয়েছেন বলা যায়। হাসান সাহেব কখনও যে মানুষ চিনতে ভুল করেননি ঝুমাই তার প্রমাণ। বাবা মারা যাবার পর সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে ফাহাদের। হাসান সাহেবের বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা সব কিছু দেখতে গিয়ে প্রথমদিকে একটু হাঁপিয়ে ওঠে সে। কিন্তু পাশ থেকে ঝুমা সাহস ও উদ্দীপনা যোগানোর ফলে সে কিছুটা হাঁফছেড়ে বেঁচেছে।
ঝুমা গ্রামের মেয়ে হলেও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। দেখতে তেমন ফর্সা না হলেও চেহারায় মায়াবী একটা ভাব আছে। উজ্জ্বল শ্যামা বর্ণ-এর মেয়েটির শরীরে যেন সব সময় গোলাপী আভা ছড়িয়ে থাকে। ফাহাদের কাছে সেটা কে মনে হয় স্বচ্ছ, টলটলে ঠিক যেমন কচুপাতায় পানি ঢেলে দিলে গড়িয়ে পড়ে তাতে কোন ময়লা আটকে থাকে না এমন মনে হয় তার কাছে।
ফাহাদের আজকের এই বিশাল খুশির পেছনের কারণ হল তার বউ ঝুমা। ভোরের দিকে, সবে মাত্র কয়েকটা পাখি কিচির-মিচির শুরু করে দিয়েছে। তখন বিছানা ছাড়ার আগে সুসংবাদটি দিল ঝুমা। বাবা হতে চলেছে সে!! সংবাদটি দিয়েই লজ্জায় ফাহাদের লোমশ বুকের ভিতরে মুখ লুকায় ঝুমা। ভোরের আলোয় তার বউকে যেন আজ নতুন করে আবিষ্কার করে ফাহাদ। সে তার বউয়ের মুখটি তুলে কপালে আলতো করে একটা চুমু দেয়। তার ভিতর এক অন্য রকম অনুভুতির খেলা করে আজ। যে অনুভূতিটা এর আগে কখনও সে অনুভব করে নি। পৃথিবীটাকে তার কাছে নতুন লাগে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে ফাহাদ।

0 মন্তব্যসমূহ