জীবনের প্যাঁচাল-মুঠোফোন

সবাই না। কিছু কিছু মানুষ হয়তো এমন, ঠিক আমার মতো একাকী, নিঃসঙ্গ। যার থেকেও কিছু নেই। আবার বলা যায় শুভাকাঙ্খী একজন মাত্র আছে। সে না থাকলে জীবনে এতোদূর এগুতে পারতাম না। যান্ত্রিক জীবন নিয়ে বর্তমানে সবাই ব্যস্ত। কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। বাবা-মা নেই অনেক আগেই পটল তুলেছেন। ভাই-বোন যারা আছে তারা তাদের সংসার ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। আত্মীয়-স্বজন থাকলেও যোগযোগটা আর আগের মতো না থাকায় তারাও এখন দূরের মানুষে পরিণত হয়েছেন। বন্ধুরা অনেকেই চাকরী নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন। মাঝে মধ্যে দেখা হলে কুশালাদি বিনিময় হয়। না হলে মুঠোফোনটিই ভরসা। ফোন কোম্পানিগুলো টাকা বেশি কাটে বলে শুধু হাই-হ্যালোতেই সীমাবদ্ধ থাকে কথা-বার্তা। কেন জানি মুঠোফোনটিকেও আর আগের মতো বিশ্বাস করতে পারি না। এই জিনিসটা আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষ যেমন আরও বেশি মিথ্যা বলা শিখেছে তেমনি জীবনটাকে আরও বেশি যান্ত্রিক ও জটিল করে তুলেছে।
কোন মানুষ নাকি সহজে মিথ্যা বলতে চায় না। কারো সামনে দাঁড়িয়ে সহজে মিথ্যা কথাও মুখে আসে না। সে সময় মিথ্যা বলতে গেলে একটু অপ্রস্তুত হতে হয়। কথা আটকে আসে। ‍কিন্তু মুঠোফোন নামক যন্ত্রটি হাতে থাকলে সে সমস্যায় পড়তে হয় না। আপনি অনর্গল মিথ্যা বলে যাবেন কোথাও একটু আটকিবে না। আপনি রুমে বসে থেকেও বলতে পারেন ‘দোস্ত, জরুরী মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলব’ কিংবা বিকাল বেলা জাতীয় সংসদের মনোরম দৃশ্য হয়তো আপনি দেখতে আসছেন প্রিয়জন কে নিয়ে সেই সময়ে যদি কেউ বলে ‘দোস্ত তুমি কোথাও?’ আপনি তখন অনাসয়ে বলতে পারেন ‘দোস্ত আমি মতিঝিলে জ্যামে আটকা পড়েছি’।
অবশ্য সকলের ক্ষেত্রে এসব প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
মুঠোফোন থাকলে এই একটি সুবিধা। আপনি মিথ্যা বললেও যার সাথে আপনি মিথ্যা বলছেন সে আপনাকে দেখছে না । সুতরাং আপনাকে সে ধরতেও পারবে না।
কিন্তু আপনার জানে জিগার দোস্ত আপনাকে ধরতে না পারলেও আপনার উপরে একজন আছেন। তিনি কিন্তু ঠিকই ধরবেন। তিনি কোন ছাড় দেবেন না।

0 মন্তব্যসমূহ