মধ্যবিত্তের দিনযাপন

পুরো সপ্তহের মধ্যে এই একটা দিনই আমি ছুটি পাই। অফিস চলা কালীন সময়গুলোতে সেই সাত সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়। খাওয়া শেষ করে রেডি হতে চলে ঘন্টা খানেক। আর বাকি দুই ঘন্টা রাখতে হয় পথে ব্যয় করার জন্য। একটু সকাল সকাল রাস্তায় গিয়ে না দাঁড়ালে আবার লোকাল বাসে উঠা যায় না কিংবা খুব কষ্ট করে উঠলেও বাদুড় ঝোলা হয়ে যেতে হয়। কিন্তু গিন্নীর কড়া নিষেধ বাদুড় ঝোলা হয়ে যেন লোকাল বাসে না উঠি। আবার ঢাকা সিটির কাউন্টার বাসেও উঠা যাবে না কেননা তখন টাকা বেশি খরচ হয়ে যাবে। তাই গিন্নীর কথার মান রাখতে এবং মধ্যবিত্তের সংসারে কিছুটা টান-পোড়ানোর হাত থেকে বাঁচার জন্যই সাত সকালে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি লোকাল বাসের আশায়। অফিস থেকে বের হতেই পাঁচটা পার হয়ে যায়। কিন্তু অফিস থেকে বের হয়েই আবারও লোকাল বাসে উঠতে গিয়ে রীতিমত এক মহাযুদ্ধে অবর্তীণ হতে হয়। কেননা তখন সকলেই সারা দিনের ক্লান্তি শেষে প্রিয় জনের সানিধ্য পাওয়ার আশায় ব্যকুল হয়ে ওঠে বাসায় ফেরার জন্য। ঠিক তখনই কিছু সুযোগ সন্ধানী লোকাল বাস অটোমেটিক সিটিং হয়ে যায়। ফলে মরার উপর খাড়ার ঘা’র মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘেমে একাকার হয়ে বাসায় এসে প্রিয় জনের হাসি মুখ খানা দেখে অবশ্য সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় মূহুর্তের মধ্যেই।
মধ্যবিত্তের জীবন না বলে নিম্নমধ্যবিত্ত বলাই মনে হয় শ্রেয়। কেননা মাইনে যা পাই তা দিয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকা যায়। বেঁচে থাকা যে যায় এ জন্যই আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করি। পুরো মাসের বাজার সাধারণত মাসের প্রথম দিকেই করে থাকি। বাসা ভাড়া পরিশোধ করে যা থাকে তার প্রায়ই পুরোটাই চলে যায় বাজার-সদাই করতে। পরে আবার হাতে টাকা থাকবে না এই ভয়ে মুলত মাসের বাজার করে থাকি। যেন অনন্ত না খেয়ে থাকতে না হয়।
আজ ছুটির দিনে একটু আরাম করে ঘুমাবো বলে গত রাতে একটু দেরি করেই ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু সাত সকালে গিন্নীর চিৎকার-চেঁচামেচিতে আরামের ঘুম হারাম করে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে আমার প্রাণপ্রিয় গিন্নী।
তার এ রূপ অগ্নিমূর্তি দেখে আমার প্রাণ পাখি বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। অনেক কষ্টে আমতা আমতা করে বললাম-‘কি হয়েছে গো’?
-‘কি হয়েছে মানে! গত দুই দিন ধরে বলছি ঘরে পিঁয়াজ নাই, সেই হুশ কি তোমার আছে। আজ পিঁয়াজ ছাড়া চুলায় আগুন জ্বলবে না, বুঝেছ’। বলেই আমার চোখের সামনে দিয়ে হনহন করে অন্দরমহলে চলে গেল গিন্নী।
আমি জানি চুলায় আগুন না জ্বললেও সংসারে আজ ঠিকই আগুন জ্বলবে। মনে মনে বলি ‘তুমি তো জান গিন্নী, আমার হুশ ঠিকই আছে কিন্তু বাজারে যে আগুন লেগেছে তা হয় তো তুমি জান না। বাজারে গিয়ে পিঁয়াজের দাম শুনে আমি বেঁহুশ হয়ে যাই। পকেটে হাত দিয়ে দেখি পিঁয়াজের যতো দাম ততোটাকা আমার এই ছোট্ট পকেটে নাই’।

0 মন্তব্যসমূহ