নববধুকে লেখা স্বামীর চিঠি

প্রিয়তমা,

জানি তোমার মন ভাল নেই। তাই ‘কেমন আছো’ এই প্রশ্ন করে তোমার মন আরও খারাপ করে দিতে চাচ্ছি না। বিয়ের পর একা একা যে মানুষ ভাল থাকতে পারে না আমি নিজেই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রিয় মানুষ বলে সব সময় তোমার মঙ্গল কামনা করে চলি প্রতিটি প্রহর। যদিও জানি আমার বিহনে তুমি ভাল নেই। হয়তো আমার মতো করেই তোমারও প্রতিটা রাত নির্ঘুম কেটে যায়। প্রিয় মানুষের সানিদ্ধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। নিশুতি রাতে কোন এক আহত ডাহুক পাখির ডাক শুনে চকিতে উঠিয়া বসে আমার কথা মনে করে নীরবে চোখের অশ্রু ঝরাও কিংবা প্রতিটা সন্ধ্যায় আজও ভুল করে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকো আমার ফেরার অপেক্ষায়। অথচ একমুঠো পার্থিব সুখ লাভের আশায় জৈবিক সুখকে বিসর্জন দিয়েছি প্রায় এক বছর হল।

 
জান, তোমার সঙ্গ লাভ করেছি অল্প কিছু দিন। বিয়ের এক মাসের মাথায় আমাকে আসতে হয়েছে বিদেশ। অজান-অচেনা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে যদিও প্রথম দিকে বেশ সমস্যা হয়েছিল। আমার ওপর তোমার ভীষণ অভিমান সেটা আগের চিঠিতেই জেনেছি। পাগলী মেয়ে, এতো অভিমান করলে কি আর জীবন চলে? জীবনের রূঢ় বাস্তবতায় সব অভিমান কে প্রকাশ হতে দিতে নাই। চাপা নিশ্বাসের নিচে ফেলে এসব দুষ্ট অভিমানগুলো কে মেরে ফেলা শিখতে হয় আর কিছু অভিমান কে মনে পুষে রাখতে হয় প্রিয় মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি করে আদর পাওয়ার জন্য।

পরাণ পাখি আমার। খুব ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে আরও কিছুদিন কাটাবার, পাশে বসে থাকার। কিন্তু বিধি বুঝি সেটা কপালে লিখে রাখেননি। তাই তো বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই আমার ভিসা এসে গেল। বিদায়ের সময় তোমার চোখে পানি দেখে আমি নিজেও আর স্থির থাকতে পারিনি। কেমন করে যেন দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল আমার চোখ থেকেও। আর তুমি পানি মুছে দিতে দিতে বলছিলে, ‘পুরুষ মানুষের কান্না করতে নেই”।

জান, বিধাতার খেলা বড়ই অদ্ভুত তাই না? একটা সময় ছিল যখন আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না। দু’জনার বসবাস ছিল যোজন যোজন দূরে। অথচ ‘বিয়ে’ নামক ছোট্ট একটি পবিত্র শব্দ আমাদের দুজকে কত কাছে টেনে এনেছে। নিবিড় আলিঙ্গনে বিনি সুতোয় বেঁধে দিয়েছে ঘর। এ বাঁধন কাটতে পারে এমন কোন ছুরি মনে হয় আজও আবিষ্কার হয়নি যদি দুই জনের মধ্যে বিশ্বাস অটুট থাকে। তুমি যেমন তোমার আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে বিশ্বাসের লাঠিতে ভর করে আমার কাছে এসেছো আমিও তেমনি আমার স্বপ্নের ডিঙি নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছি বিশ্বাসের মহাসমুদ্রে।

প্রিয়তমা, জানি অপেক্ষার প্রহর সহজে কাটে না। আর সেই অপেক্ষা যদি হয় কোন প্রিয় মানুষের জন্য তাহলে সময়গুলো যেন মহাকালের মতোই দীর্ঘ হয়ে যায়। তারপরেও মানুষ অপেক্ষায় থাকে, থাকতে হয়। আর তাই অপেক্ষা শেষে প্রিয় মানুষের দেখা পেলে প্রতিটা মানুষের মুখে দেখা যায় প্রশান্তির হাসি।
তোমার কাছে ফিরে যাবার জন্য আমিও ব্যাকুল হয়ে আছি। আর কয়েক মাস অপেক্ষা। তারপরেই তোমার একাকী অপেক্ষার দীর্ঘ রাতের অবসান হবে। সেই পর্যন্ত ভাল থেকো জান।


ইতি তোমার
জান

2 মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
প্রিয়তমা,

জানি তোমার মন ভাল নেই। তাই ‘কেমন আছো’ এই প্রশ্ন করে তোমার মন আরও খারাপ করে দিতে চাচ্ছি না। বিয়ের পর একা একা যে মানুষ ভাল থাকতে পারে না আমি নিজেই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রিয় মানুষ বলে সব সময় তোমার মঙ্গল কামনা করে চলি প্রতিটি প্রহর। যদিও জানি আমার বিহনে তুমি ভাল নেই। হয়তো আমার মতো করেই তোমারও প্রতিটা রাত নির্ঘুম কেটে যায়। প্রিয় মানুষের সানিদ্ধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। নিশুতি রাতে কোন এক আহত ডাহুক পাখির ডাক শুনে চকিতে উঠিয়া বসে আমার কথা মনে করে নীরবে চোখের অশ্রু ঝরাও কিংবা প্রতিটা সন্ধ্যায় আজও ভুল করে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকো আমার ফেরার অপেক্ষায়। অথচ একমুঠো পার্থিব সুখ লাভের আশায় জৈবিক সুখকে বিসর্জন দিয়েছি প্রায় এক বছর হল।

জান, তোমার সঙ্গ লাভ করেছি অল্প কিছু দিন। বিয়ের এক মাসের মাথায় আমাকে আসতে হয়েছে বিদেশ। অজান-অচেনা পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে যদিও প্রথম দিকে বেশ সমস্যা হয়েছিল। আমার ওপর তোমার ভীষণ অভিমান সেটা আগের চিঠিতেই জেনেছি। পাগলী মেয়ে, এতো অভিমান করলে কি আর জীবন চলে? জীবনের রূঢ় বাস্তবতায় সব অভিমান কে প্রকাশ হতে দিতে নাই। চাপা নিশ্বাসের নিচে ফেলে এসব দুষ্ট অভিমানগুলো কে মেরে ফেলা শিখতে হয় আর কিছু অভিমান কে মনে পুষে রাখতে হয় প্রিয় মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি করে আদর পাওয়ার জন্য।

পরাণ পাখি আমার। খুব ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে আরও কিছুদিন কাটাবার, পাশে বসে থাকার। কিন্তু বিধি বুঝি সেটা কপালে লিখে রাখেননি। তাই তো বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই আমার ভিসা এসে গেল। বিদায়ের সময় তোমার চোখে পানি দেখে আমি নিজেও আর স্থির থাকতে পারিনি। কেমন করে যেন দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল আমার চোখ থেকেও। আর তুমি পানি মুছে দিতে দিতে বলছিলে, ‘পুরুষ মানুষের কান্না করতে নেই”।

জান, বিধাতার খেলা বড়ই অদ্ভুত তাই না? একটা সময় ছিল যখন আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না। দু’জনার বসবাস ছিল যোজন যোজন দূরে। অথচ ‘বিয়ে’ নামক ছোট্ট একটি পবিত্র শব্দ আমাদের দুজকে কত কাছে টেনে এনেছে। নিবিড় আলিঙ্গনে বিনি সুতোয় বেঁধে দিয়েছে ঘর। এ বাঁধন কাটতে পারে এমন কোন ছুরি মনে হয় আজও আবিষ্কার হয়নি যদি দুই জনের মধ্যে বিশ্বাস অটুট থাকে। তুমি যেমন তোমার আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে বিশ্বাসের লাঠিতে ভর করে আমার কাছে এসেছো আমিও তেমনি আমার স্বপ্নের ডিঙি নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছি বিশ্বাসের মহাসমুদ্রে।

প্রিয়তমা, জানি অপেক্ষার প্রহর সহজে কাটে না। আর সেই অপেক্ষা যদি হয় কোন প্রিয় মানুষের জন্য তাহলে সময়গুলো যেন মহাকালের মতোই দীর্ঘ হয়ে যায়। তারপরেও মানুষ অপেক্ষায় থাকে, থাকতে হয়। আর তাই অপেক্ষা শেষে প্রিয় মানুষের দেখা পেলে প্রতিটা মানুষের মুখে দেখা যায় প্রশান্তির হাসি।
তোমার কাছে ফিরে যাবার জন্য আমিও ব্যাকুল হয়ে আছি। আর কয়েক মাস অপেক্ষা। তারপরেই তোমার একাকী অপেক্ষার দীর্ঘ রাতের অবসান হবে। সেই পর্যন্ত ভাল থেকো জান।


ইতি তোমার
জান