ভালবাসার নীল কষ্ট

প্রিয় সুনয়না,

একুশ শতকের এই ডিজিটাল যুগে এই চিঠি দেখে তুমি হয়তো একটু অবাক হবে। ভাববে আমি হয়তো এখনও সেই মান্ধাতার আমলেই পড়ে আছি। আমি জানি এমতেই তুমি চিঠি লেখা পছন্দ কর না। ভাবো এটা শুধু সময়ের অপচয়। জানি এই ব্যস্ত পৃথিবীতে সময় তোমার কাছে অনেক মূল্যবান। কিন্তু তুমি তো জান না যে মুখের ভাষায় যেটা বলা যায় না কলমের ভাষায় সেটা বলা যায় খুব সহজেই। তুমি কি বলতে পারবে কত দিন ধরে তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। তোমার মুঠোফোনটাও বন্ধ। তোমাকে আর আগের মতো পাওয়া যায় না। তাই এখন এই চিঠিই শেষ ভরসা।
আচ্ছা তুমি বলতো মানুষ এতো দ্রুত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় কেন? একটা সময় ছিল যখন আমিই ছিলাম তোমার সব। তোমার স্বপ্ন, চিন্তা- চেতনা সবকিছুই আমাকে কেন্দ্র করে আবর্তীত হতো। প্রতিদিন বিকালে আমরা যে বটগাছটির নীচে গিয়ে বসতাম সেখানে এখন ময়লার স্তর জমেছে। জমবেই না বা কেন, এখন তো সেখানে বসে কেউ আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকে না। প্রিয়ার হাতটি ধরে তার মুখের দিকে চেয়ে থাকে না।

কয়টা বাজে জানো, রাত তিন টা সতের মিঃ। অবাক হলে মনে হয়।যে ছেলেটি রাত দশটার মধ্যে ঘুমাতে যেত এখন কিভাবে সে এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে। অবাক হওয়ারই কথা। এখন আমার প্রতিটা রাত এভাবেই কাটে। নিশাচর পাখির মতো সারা রাত কারে যেন খুঁজে-ফিরি। খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষে না পাওয়ার বিষাদে কখন যে একটু ঘুমিয়ে পড়ি নিজেই জানি না। আমি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে গেলে অবাক হয়ে যাই। কেন যেন আস্তে আস্তে আমি নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আগের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা। বুকের মধ্যে কোথায় যেন সব সময় একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করি। ভয় পেয় না, এটা কোন অসুখ নয়। এটা হল তোমার দেয়া ভালবাসার নীল কষ্ট। যে কষ্টটা সব সময় বাইরে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাকে বের হয়ে আসতে দেই না। বুকের ভেতর আরো জোরে তাকে চেঁপে ধরে রাখি। কারণ কষ্টটা একবার বের হয়ে গেলে যে আর ফিরে আসবে না। আমি তো এই কষ্টটাকে সারা জীবন বুকে লালন করে রাখতে চাই, যাতে তোমাকে মনে রাখতে পারি।
অনেক তো লিখলাম। আর লিখতে পারছি না। কলমও যে আর চলে না। ভালো থাকো।


ইতি,
তোমার নীল কষ্ট।

0 মন্তব্যসমূহ