“মাগো” তুমি ভালো থেকো

“মা”
এখন কেমন আছো তুমি। ইট-সিমেন্টের চার দেয়াল ঘেরা এই ঢাকা শহরে প্রতিটি ক্ষন শুধু তোমার কথা মনে পড়ে। এখন আর ইচ্ছে হলেই আগের মতো তোমায় দেখতে পারি না। তোমার কথা শুনতে পারি না কয়েক বছর ধরে। তুমি যে এখন আমায় ছেড়ে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছ। 
জান মা, আমি আর তোমার সেই ছোট খোকাটি নেই। এখন আমি অনেক বড় হয়েছে, চাকরী করছি। গাড়ি, বাড়ি সবই আছে আমার কিন্তু শুধু তুমি নেই। আমার প্রতিটিক্ষণ, প্রতিটি সময় তোমাকে এখন বড় মিস করি মা। সেই রাতটির কথা মনে হলে এখনও চোখের জল ধরে রাখতে পারি না। তখন ছিল প্রচন্ড শীতের সময়। সংবাদ পেলাম তুমি অসুস্থ্য। শোনা মাত্রই ঢাকা থেকে রওনা হলাম। কিন্তু পথে ঠান্ডা লেগে যাওয়ায় প্রচন্ড কাঁশি আর জ্বর হল আমার। বাড়িতে এসে দেখি তুমি বিছানায় শুয়ে আছো। আমাকে দেখা মাত্রই উঠে বসলে তুমি। আর বললে, আমি এখন ভালো হয়ে গেছি বাবা। আমার আর কোন অসুখ নেই। রাতে পাশের বেডে আমাকে শুতে বললে তুমি। কিন্তু কাঁশির কারণে ঘুম আসছিল না আমার। মাঝরাতে দেখি তুমি বিছানা থেকে উঠে তেল আর রসুন একসঙ্গে মিশিয়ে গরম করে আমার গলায় মালিশ করছো আর বলছ, দেখিস এখন আর কাঁশি বের হবে না। সত্যি মা সেদিন রাতে আর কোন কাঁশি হয়নি আমার। এখন সামান্য কাঁশি হলে তোমার সেই যাদুর হাতের তেলের কথা মনে পড়ে মা। তোমার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে বারবার।
মাগো, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর সবাই কেনম যেন পর হয়ে গেছে। তোমার বড় দুই ছেলে বিয়ে থা করে আলাদা হয়ে গেছে। তারা এখন ভুলেই গেছে যে তাদের একটা ছোট ভাই ঢাকায় থাকে। ভুল করেও তারা এখন আমার কোন খবর নেয় না, ফোন দেয় না। কি করি, কোথায় যাই, কখন খাই, কখন ঘুমাই এসবের এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না মা। তোমার মত করে এখন আর কেউ বলে না, বাবা দুপুরের খাবার খেয়েছিস তো, ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে তো? তাড়াতাড়ি ঘুমাবি কিন্তু, তোকে অনেক বড় হতে হবে যে।
বড় আমি হয়েছি মা। এমন বড় হয়েছি যে, ইচ্ছে হলেই এখন চাঁদও ছুঁতে পারি। কিন্তু তোমায় ছুঁয়ে দেখতে পারি না মা। এখন আমার বড় কষ্ট হয় মা, তোমার ঋণ শোধ করতে পারি নি বলে। টাকার অভাবে তোমার চিকিৎসা করাতে পারি নি, ভালো ডাক্তার দেখাতে পারি নি। এখন আমার টাকা থাকলেও তুমি নেই মা। মাঝে মাঝে অর্থের ওপর বিতৃষ্ণা জাগে। নিজেকেই প্রশ্ন করি, টাকা তুই হাতে আসলি ঠিকই কিন্তু আরও আগে আসলে না কেন?

মাগো, তোমার কোন তুলনা হয় না। তোমার তুলনা শুধু তুমি নিজেই। আমি জানি মা শত ডাকলেও তুমি আর আমার কোন কথা শুনবে না, হাজার চিঠি পাঠালেও ডাকপিয়ন তোমার ঠিকানা খঁজে পাবে না। তার পরেও আমি তোমার সাথে কথা বলি, চিঠি লিখি মন যে মানে না।
আজ রাখি মা, আর একদিন চিঠি লিখব। চিঠি শেষ করার আগে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দুহাত তুলে দোয়া করি তিনি যেন তোমায় বেহেস্তবাসী করান।

ইতি
তোমার আদরের সন্তান
বৈশাখী ঝড়।

0 মন্তব্যসমূহ