সহজ কথা যায় না বলা সহজে

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, সহজ কথা যায় না বলা সহজে। তবে সহজ কথা কি একটু ঘুরিয়ে বলা উচিৎ? কিন্তু আমি কোন সহজ কথা ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে বলতে পারি না। সহজ কথাটি আমার মুখ হতে ফুট করে বের হয়ে যায়। আর সেটা যদি হয় চরম সত্য তাহলে তো মুখ বন্ধ থাকলেও সেটা কলমের খোচায় বেরিয়ে যায়। এবার আসি আমার সহজ কথায়।
শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে বলা যায় বর্তমানে বাংলার মানুষ, গণমাধ্যম দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এর প্রথম ভাগে রয়েছে সরকার ও বাম ঘরনার রাজনীতিবিদ যারা শাহবাগের আন্দোলন করে শুরু থেকেই সর্মথন জানিয়ে আসছে। আর একভাগে রয়েছে যারা শাহবাগের আন্দোলন কে শুরু থেকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যারা। আমার মনে হয় আরও একটি ভাগ রয়েছে যারা আমার মতো শুরুর দিকে শাহবাগের আন্দোলন কে সর্মথন দিয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমানে আন্দোলনের ধরন দেখে তারা আর শাহবাগে যান না কিন্তু মনেপ্রাণে রাজাকারদের ফাসি তারা ঠিকই চান।
শাহবাগ আন্দোলন ছিল রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে। তখন সেখান থেকে স্লোগান দেয়া হয়েছিল ’একটাই দাবী, ফাঁসি, ফাঁসি। মূলত সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে সেখানে জমায়েত হয়েছিল বাংলা তরুণ। কিন্তু বর্তমানে সেই এক দফা দাবী পরিণত হয়েছে ছয় দফা দাবীতে। সেখান থেকে ধর্ম বিরোধী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ আঙ্গুল তোলা হচ্ছে ব্লগারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলন যে এখন আর ব্লগারদের নিয়ন্ত্রণে নেই তার প্রমান সতের তারিখের মহাসমাবেশ, রায়ের বাজার বধ্যভূমীর সমাবেশ এবং সর্বশেষ গতকাল মিরপুরের সমাবেশ। এসব সমাবেশে দেখা গেল ব্লগারদের পিছনে ফেলে সরকারপন্থি বাম ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাইকের সামনে দাড়িয়ে থাকতে।
আমার তো মনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সামনে রেখে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণভার হাতে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। একের পর এক সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা অবরোধ কর্মসূচিতে হাজির হয়ে ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ ফাঁসির দাবির প্রতি তাদের জোরালো সমর্থনের কথা জানিয়ে অবরোধকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন।
ইদানিং আবার প্রজন্ম চত্তর থেকে গণমাধ্যমের প্রতি বিষোদগার যেমন করা হচ্ছে তেমনি পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল, মাহমুদুর রহমানের প্রতিও আক্রমণাত্বক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। নব্য রাজাকার বলে অপবাদ দেয়া হচ্ছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান, সাহস, বীরত্ব ভোলার মত নয়। বীর বিক্রম, বীর উত্তম, এবং বীর প্রতিক অনেকেই আছেন, কিন্তু বঙ্গবীর কিন্তু একজনই, তাকেই কিনা বলা হচ্ছে নব্য রাজাকার। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমারদেশ, নয়াদিগন্ত পত্রিকায় আগুন লাগানো হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক শাখা অফিস সহ এটিএম বুথে হামলা চালানো হচ্ছে। আমার মনে আন্দোলনকারী তাদের মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসছে। আর এর মূল কারণ যারা আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই অনলাইন ব্লগারস অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের হাতে এখন আন্দোলনের নিয়স্ত্রণভার নেই। নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বাম আর সরকার দলীয় লোকজনের হাতে। কেননা এখান থেকে এখন আর যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির জোরাল আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। তার পরিবর্তে শোনা যাচ্ছে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে, জামাত কে নিষিদ্ধ করতে হবে, জামাতের প্রতিষ্ঠান গুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। আর সরকারও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলছে জামাতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে, মাহমুদুরকে গ্রেফতার করা উচিৎ ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের কে মনে রাখতে হবে যে আমাদের দাবী ছিল সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাসি।
যুদ্ধাপরাধী সে আওয়ামীলীগের হোক, জামাতের হোক বা বিএনপির হোক তথা সে যে দলের, যে মতেরই হোক না কেন তার ফাসি দিতে হবে।
যদি শাহবাগ থেকে এভাবে অন্যান্য দাবী তোলা হয় তাহলে আমি বলব এখান থেকে দাবী তোলা হোক সাগর-রুনি হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। শিশু রাব্বি, নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ কে যারা দিন-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের ফাসি দেওয়া হোক। সানাউল্লাহকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করা হোক। বিচার করা হোক পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনিতে জড়িত দুর্নীতিতে জড়িতদের।

0 মন্তব্যসমূহ